প্রকাশিত: Sat, May 11, 2024 1:41 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:20 PM

জয়তু ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যোদ্ধা-জনতার সংগ্রাম

মনজুরুল হক : ১৯৪৫ সালে নাৎসি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর থেকে প্রতিবছর ৮ মে রাশিয়াতে (আগে বার্লিনেও পালিত হতো) পালন করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয় এবং ফ্যাসিবাদী জার্মান বাহিনীর পরাজয়ের বার্ষিকী হিসাবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশে ও বিদেশে, বিজয়ের মূল কৃতিত্ব দেওয়া হয় আমেরিকা বা ইউরোপীয় শক্তিগুলিকে। কেউ কেউ এমন কথাও বলেন যে হিটলার আসলে নিজের ভুলেই পরাজিত হয়েছে। কোনো কোনো পক্ষ আর একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘মিত্রবাহিনীর রণকৌশলই জয় নিশ্চিত করেছিল’।

অথচ এই বিজয়ের মূল নায়ক ছিলেন মহান স্তালিন, যিনি ওই যুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যার যুদ্ধ বিচক্ষণতা সে সময়কার যেকোনো জেনারেলের চেয়েও সেরা ছিল। কিন্তু স্তালিনের সেই কৃতিত্বকে খাটো করার দুরভীসন্ধি সমালোচকদের এমন এক জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে যেখান থেকে তারা কেবলই পশ্চিমা কৃতিত্ব দেখে, কখনোই আসল বীরত্ব দেখে না। এমনকি কখনো কখনো কোনো আলোচনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলা হলেও স্তালিনের অবদানের কথা বাদ দেওয়া হয়। 

শুধু যে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার ইতিহাস আলোচনায় স্তালিনের ভূমিকাকে খাটো করা হয় তাই নয়, স্তালিন সম্পর্কে মিথ্যাচারও চলে নিখুঁতভাবে। তাঁকে চিহ্নিত করা হয় ‘স্বৈরশাসক’ রূপে। বলা হয় যে তিনি একদম বিরুদ্ধমত সহ্য করতেন না। বিরুদ্ধমত বা ভিন্নমত পোষণ করার কারণে তাঁর আমলে অসংখ্য মানুষকে বন্দি অথবা হত্যা করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে অথবা তাদের নির্বাসন দেওয়া হয়েছে, এমন প্রচার শুধু জোরালো নয়, রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক। এই অপপ্রচারের পেছনে সেই চল্লিশের দশক থেকেই কোটি কোটি ডলার/পাউন্ড ব্যয় করে আসছে আমেরিকা-ব্রিটেন। এদেশের অনেক বামপন্থীও মনে করেন স্তালিন ‘বাড়াবাড়ি’ করেছিলেন, তিনি ছিলেন নৃশংস।

আজ থেকে দু-চার বছর আগেও যে দৃশ্য কল্পনা করা যেত না, এখন কল্পনা নয়, তা জাজ্বল্যমান বাস্তবতা। ঠিক এই মুহূর্তে রাশিয়ার ৪৯ ভাগ মানুষ স্তালিনকে সোভিয়েতসহ সারা বিশ্বের রক্ষক মনে করে। গত ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ‘দ্য মস্কো নিউজ’ পত্রিকাটি একটি জরিপ পরিচালনা করে দেখিয়েছে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জনগণের অন্তত ৪৬ ভাগ সোভিয়েত ইউনয়নে ফেরত যেতে চায়। এখন লেনিন-স্তালিনের প্রিয় লেনিনগ্রাদে ছবির এই মানুষেরা সগর্বে হাজির হয়। অকুতোভয় এসব রেড আর্মির প্রাক্তন সৈনিকেরা কিছুতেই এই ৮ মে দিনটিকে ভোলেন না। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমানের রুশ ফেডারেশনের নতুন প্রজন্ম যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করে তাদের যুদ্ধজয়ের রেড আর্মিকে এবং অকুতোভয় রুশ জাতিকে। জয়তু ৮ মে, মহান রেড আর্মি আর শ্রমিক-কৃষকের যৌথবাহিনীর বিজয় দিবস। জয়তু রেড আর্মির সেনা নায়ক কমরেড জোসেফ স্তালিন। জয়তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই লক্ষ লক্ষ শহীদ বীর জনতা। জয়তু ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যোদ্ধা-জনতার সংগ্রাম। লেখক  ও ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট